ফুড আপ্পি নিয়ে কেন এত মাতামাতি

 -janntul Ferdousi

Food api - Fabia Hasan Monisha 


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কদিন ধরে ‘ফুড আপ্পি’ নিয়ে সরব অসংখ্য মানুষ। অনেকেই তাঁকে নিয়ে কথা বলছেন। কে এই ফুড আপ্পি? তাঁর নাম মূলত ফাবিহা হাসান মনীষা। তিনি মূলত একজন ফুড ভ্লগার। হোটেল-রেস্তোরাঁয় ঘুরে ঘুরে খাবার পরখ করেন, রিভিউ দেন এবং সেসব নিয়ে বানান ভিডিও।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই দুনিয়ায় ফুড ভ্লগার আলোচিত ও সুপরিচিত একটি নেশা বা পেশা হয়ে উঠেছে। ‘রাফসান দ্য ছোটো ভাই’, ‘খুধা লাগছে’, ‘পেটুক কাপল’—এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের ফুড ভ্লগিংয়ের ভক্ত লাখ লাখ মানুষ, বিশেষত তরুণ প্রজন্ম। ফুড আপ্পিও তাঁদের মধ্যে একজন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে কেন এত আলোচনা?

ফুড আপ্পিকে কিছুদিন আগেও আমরা অনেকেই চিনতাম না। গত অক্টোবরে তিনি তাঁর নিজের পেজ থেকে একটি পোস্টে প্রকারান্তরে বলে দিলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অশ্লীলতা শেখানো হয়। এর মধ্য দিয়ে পুরো বেসরকারি শিক্ষা খাতকে তিনি বিশাল এক নেতিবাচক তকমা দিয়ে দিলেন। এ কারণে শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই নন, সচেতন মানুষও এমন ভাষ্যের বিরুদ্ধে সরব হলেন।

ফুড ভ্লগার হিসেবে ফুড আপ্পির তৈরি হয়েছে বিশাল এক ফ্যানবেজ বা অনুসারীর দল। তাঁকে আমরা অনেকে না চিনলেও লাখ লাখ মানুষের কাছে ঠিকই তিনি পৌঁছে গেছেন। ফলে এমন একটি কথা যখন তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই তা নিয়ে তুমুল প্রতিক্রিয়া হওয়ারই কথা এবং তা-ই হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তাঁকে আমরা যারা এত দিন চিনতাম না, তাদেরও চেনা হয়ে গেল। চেনা বলতে ফুড আপ্পি বলে একজন আছেন, যিনি ফুড ভ্লগিং করেন এবং তা লাখ লাখ মানুষ দেখেন।

এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন জনপ্রিয় উপস্থাপকের অনুষ্ঠানে এক মাসের ব্যবধানে দুবার সামনে আসেন ফুড আপ্পি, মানে মনীষা। প্রথম শোতে তিনি তাঁর সাবেক স্বামীর নামে নানা ধরনের অভিযোগ ও বিষোদ্‌গার করেন। সেখানে তাঁদের দাম্পত্য কলহ ও পারিবারিক সমস্যাগুলো খোলাখুলি প্রকাশ করেন তিনি, যা নিয়ে বেশ তর্কবিতর্ক তৈরি হয়।

তবে বিষয়গুলোর উপস্থাপনা এমন ছিল যে সেখানে আরেক পক্ষ, মানে তাঁর সাবেক স্বামীর উপস্থিতি বা তাঁর বক্তব্য শোনাটাও জরুরি হয়ে পড়েছিল। তখন সামাজিক মাধ্যমে তাঁর সাবেক স্বামী রুহুল আমিনের বক্তব্য শোনার দাবি ওঠে। এ কারণে পরবর্তী শোটি হয় দুজনকে নিয়েই। সেখানে দেখা যায়, আগের শোতে মনীষার অনেক বক্তব্যে গরমিল ছিল। অনেক নেটিজেনের মতে, মনীষা আসলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে অসত্য বলেছেন এবং নিজের দোষ সাবেক স্বামীর ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন।

দেশের অনেক পরিবার বা অনেকের দাম্পত্য জীবনের সমস্যার মতোই ছিল ব্যাপারটা; যেখানে নির্যাতন, যৌতুক, মোহরানা ইস্যু, প্রতারণা, মামলা, গ্রেপ্তার, বিচ্ছেদ, সন্তানের দায়িত্ব—সবকিছুই যুক্ত। স্বাভাবিকভাবেই কারও জীবনে এমন জটিলতা আমরা কেউই আশা করি না।

এর মধ্যে মনীষা পুনরায় বিয়ে করে বর্তমান স্বামীর সহায়তায় ফুড ভ্লগার হিসেবে নিজের সফল ক্যারিয়ার গড়েছেন, তাঁর দাবি সেখান থেকে মাসে তার আয় ১০/১১ লাখ টাকা, অন্যদিকে সন্তান নিয়ে এখনো একক বাবা হিসেবে জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন রুহুল আমিন।

যাহোক, এই সবকিছু নিয়েই মূলত ফুড আপ্পিকে ঘিরে যত আলোচনা, লাখো মানুষের পক্ষে-বিপক্ষে ভাগ হয়ে যাওয়া। ভিকটিম ব্লেমিং ছাড়াও নানা সমালোচনা, ট্রল বা ঠাট্টা-তামাশায় মেতে ওঠেন সবাই। বসে যায় সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল—কে অপরাধী বা কে নিরাপরাধ?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগের নতুন এই প্রবণতা কতটা প্রবল হয়ে উঠেছে, এর আগেও আমরা বেশ কিছু ইস্যুতে দেখেছি। সবকিছু সবার সামনে ‘এক্সপোজ’ করে দিয়ে কাউকে শাস্তি দিয়ে একধরনের ‘পৈশাচিক আনন্দ’ খুঁজে পেতে চান অনেকে। সেখানে কে আসলে সত্য বলছেন বা লুকাচ্ছেন, তা যাচাই-বাছাই করার সুযোগ থাকে না।


Post a Comment

Previous Post Next Post